লালমনিরহাটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে আগুনে পুড়ে ৬জন নিহতের ঘটনায় ৭৩জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আসামীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় ৬জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনার ৯ মাস ২২ দিন পর মামলাটি করেছেন নিহত ব্যক্তিদের সহযোদ্ধা পরিচয় দেওয়া আরমান আরিফ (২৭) নামের এক তরুণ। তিনি লালমনিরহাট জেলা শহরের খোর্দ্দ সাপটানা নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার বাসিন্দা। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের (৪৬) শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-সংলগ্ন বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে পুড়ে মারা যান ৬জন। তাঁরা সবাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন-এর অংশ ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
পুলিশ জানায়, সোমবার (২৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলাটি করা হয়। এরপর রাতেই অভিযান চালিয়ে ৬জন এজাহারভুক্ত আসামীকে শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- লালমনিরহাট শহরের পূর্ব থানা পাড়ার বাসিন্দা ও পৌর আওয়ামী লীগের ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদ হাসান ওরফে ভুট্টু (৪৮), রিফিউজি কলোনীর বাসিন্দা পৌর আওয়ামী লীগের ৭নং ওয়ার্ডের সভাপতি সেলিম খান বকুল (৫৬), বসুন্ধরা এলাকার শরীফ মোহাম্মদ আতাউল্লাহ (৫০), লালমনিরহাট সদরের কাজীর চওড়া গ্রামের বাবুল (৩৫), ওয়ারলেস কলোনীর মোঃ দোয়েল (৩৬) ও রিফিউজি কলোনীর মোঃ জুয়েল মিয়া (৩৯)। প্রথম ২জন ছাড়া অন্য ৪জন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে শরীফ মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, জাহিদ হাসান ও বাবুলকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্য ৩জনকে বুধবার (২৮ মে) আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতার একটি মিছিল সুমন খানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে আসামীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর এজাহারভুক্ত আসামীরা ৬জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে তাঁদের সুমন খানের বাড়ির ভেতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে আসামীরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয়।
নিহত ৬জন হলেন- বসুন্ধরা এলাকার জোবায়ের হোসেন (১৭), সুরকীমিল এলাকার আল শাহরিয়ার রিয়াদ তন্ময় (১৯), আদিতমারীর খাতাপাড়া গ্রামের শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ (১৮), নবীনগরের জনি মিয়া (২০), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রাধিক হোসেন রুশো (১৯) এবং বানভাসা এলাকার রাজিব উল করিম সরকার (১৮)।
মামলার বাদী আরমান আরিফ বলেন, আমাদের সহযোদ্ধা ৬জনকে পরিকল্পিতভাবে আটক করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এত দিনেও কোনো সঠিক তদন্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আশায় মামলাটি করেছি।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরনবী ও পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মণ্ডল বলেন, মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানসহ ৩৮জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫জনকে আসামী করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।